মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যত | মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন

 বর্তমানে শিল্পায়নের এই সময়ে সব থেকে বেশি সম্ভাবনাময় পেশা হিসেবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কে ধরা হয়ে থাকে।একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রের ডিজাইন,নির্মাণ ও রক্ষানাবেক্ষন  এর কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। 

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যত - মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন - future of mechanical engineering - bddraft.com


আজকের পোস্টটি মূলত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। অর্থাৎ আজকের পোস্টটি যারা বিস্তারিত এবং মনোযোগ সহকারে পড়বেন তারা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কি, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যৎ কেমন, ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করে কিভাবে ভালো ক্যারিয়ার গড়বেন এই সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ-


মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ কি

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা মূলত বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের টারবাইন, অল্টারনেটর, ও জেনারেটরের নকশা বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। তাছাড়া মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা এয়ারকন্ডিশনিং মেশিন, বিমানের ইঞ্জিন, রেফ্রিজারেটর উৎপাদন কারখানার মাননিয়ন্ত্রণ ও কমিশনিংয়ের কাজগুলা করে থাকেন।তাহলে অবশ্যই ইতিমধ্যে বুঝে গিয়েছেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ কি এই সম্পর্কে। 


মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা কেন করবেন

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা কেন করবেন এই বিষয়ে জানাটা অবশ্যই জরুরী।যত সময় যাচ্ছে তত নতুন সব প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটছে। কাজকে সহজ করার জন্য মানুষ অনেক কিছু আবিষ্কার করছে। আর এই সকল নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন থেকে শুরু করে পরিচালনা সহ সকল কাজ করে থাকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা। যার কারনে সময়ের সাথে সাথে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বেড়েই চলেছে। তাই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন সেক্টরে যদি আপনি পড়াশোনা শেষ করতে পারেন তাহলে অবশ্যই ভবিষ্যতে ভালো চাকরি পাওয়ার মাধ্যমে আপনার ক্যারিয়ার সঠিকভাবে করতে পারবেন। 

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রিভিউ 

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা যন্ত্র প্রকৌশল হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ও বিস্তৃত ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্র। সহজ ভাষায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে বলা হয়ে থাকে মাদার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকৌশলের একটি বিষয় যাতে যান্ত্রিক ব্যবস্থা সমূহ রক্ষণাবেক্ষণ, নকশা,উৎপাদন ও বিশ্লেষণের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গতিবিজ্ঞান, বলবিজ্ঞান, তাপ গতিবিজ্ঞান ও শক্তি সম্বন্ধে একটি সুস্পষ্ট জ্ঞান এই প্রকৌশল  অধ্যায়নের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এর মাধ্যমে যন্ত্র প্রকৌশলীরা বিমান, মোটরগাড়ি, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শিল্প কারখানার যন্ত্র পাতি নির্মাণ এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের যন্ত্রাদি নির্মাণের জন্য এই জ্ঞান ব্যবহার করে থাকেন।


মানুষ অনেক আগে থেকেই অর্থাৎ আদিকাল থেকে চিন্তাভাবনা করত কিভাবে তাদের কাজগুলোকে সহজ ও সুন্দর করা যায়। কিভাবে অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুততার সাথে এ কাজগুলো করা যায়। ধীরে ধীরে তারা আবিষ্কার করে ফেলল আগুন, চাকা এবং তার সাথে বেসিক কিছু জিনিস। ধীরে ধীরে সভ্যতার বিস্ফোরণ ঘটতে ঘটতে কালের বিবর্তনে তারা যানবাহন আবিষ্কার করে ফেললো।


আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার সহজ উপায়


তারপর আবিষ্কার করে ফেলল জ্বালানি চালিত ইঞ্জিন। বর্তমানে মানুষের আবিষ্কারের ইচ্ছা ও গতির সীমা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে এখন আকাশ থেকে মহাকাশে চলে যাচ্ছে। মানুষ এখন চাঁদে গিয়ে মঙ্গল গ্রহ থেকেও বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করে আসছে যা সাধারণত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্যই সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া রাস্তার যানবাহন, আকাশে বিমান ও নদীতে জাহাজ এ সকলই হচ্ছে যন্ত্রপ্রকৌশলের অবদান। যন্ত্র প্রকৌশলের মধ্যে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। যেমনঃ-


  • Heat TransferTribology
  • Technologies
  • Advanced Energy Systems
  • Noise Control & Acoustics
  • Systems & Design
  • Pressure Vessels & Piping
  • Solid Waste Processing
  • Rail Transportation
  • Nuclear Engineering
  • Fluid Engineering


যন্ত্রপ্রকৌশলের  মধ্যে এই বিষয়গুলো ছাড়া আরো কিছু বিষয় রয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে আমরা যে বিষয়গুলোকে আধুনিক সভ্যতার বিস্তারের হাতিয়ার বলে মনে করি তার সবকিছুই রয়েছে যন্ত্রপ্রকৌশলে।এবার আপনাদেরকে জানাবো বাংলাদেশে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবস্থা সম্পর্কে। বাংলাদেশ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে সেটি হচ্ছে অনেকেই বলে থাকেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি কঠিন বিষয় এবং এটা নিয়ে পড়াশোনা করলে বাংলাদেশে তেমন চাকরি পাওয়া যায় না। 


সত্য কথা হলো, বাংলাদেশে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যারা পড়াশোনা করে থাকেন তাদের অবশ্যই চাকরি রয়েছে। সেটা আপনারা জব প্রোভাইডারদের সাইট গুলা থেকে ঘুরে আসলেই বুঝতে পারবেন। যারা দেশের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর চাকরি করতে চান না তারা চাইলে বিদেশে এই বিষয়ে চাকরি পেতে পারেন। কেননা বিদেশে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ২০০৯ সালের একটি পরিসংখ্যার অনুযায়ী প্রতি বছরে ৬% করে সারা বিশ্বে যন্ত্রপাতির কর্মসংস্থান বাড়ছে এবং প্রত্যেক স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের প্রাথমিক অবস্থায় বেতন হলো প্রতিবছরে ৫৮ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ যন্ত্রপ্রকৌশলীদের গড় আনুমানিক আয় প্রতি বছরে ৭৪ হাজার মার্কিন ডলার যা সর্বোচ্চ কোন কোন বছরে ৮৬ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে পড়াশোনা করলে ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে এই নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকার কথা নয়। 


মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন

একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন কত হয় বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে চাকরিজীবীরা কেমন বেতন সুবিধা পাবেন এই সম্পর্কে অবশ্যই সুস্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেডে সরকারি প্রকৌশলীদের বেতন শুরু হয় ৩২,০০০ টাকা থেকে। চাকরিরত ব্যক্তির পদোন্নতির ফলে এই বেতনের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তবে বর্তমানে অধিকাংশ বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান সরকারি মালিকানাধীন লিমিটেড কোম্পানি হয়ে যাওয়ায় এখন প্রথম অবস্থায় এই সকল চাকরিজীবীদের বেতন দেওয়া হয়ে থাকে ৫২ হাজার টাকা।


বিনা অভিজ্ঞতায় বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরি পাওয়া যেতে পারে। এই সকল চাকরি প্রার্থীরা চাইলে চিনি,তামাক, চামড়া, খাদ্য উৎপাদন কারখানা, ব্যাংক ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের মাধ্যমে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতে পারেন।তাছাড়া অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা মাসে লক্ষাধিক টাকা ইনকাম করে থাকেন এমন নজিরও রয়েছে। 


আরো পড়ুন ঃ  তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম


মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যত

একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে বা ভবিষ্যৎ কেমন হয় অবশ্যই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে এই বিষয়ে জানতে হবে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহকারি প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে থাকে।পরবর্তীতে নিজের কর্মদক্ষতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর পর তারা পদোন্নতি পেয়ে থাকে। 


সরকারি খাতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা সহকারী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে প্রধান প্রকৌশলী আর বেসরকারি খাতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা হেড অফ অপারেশন বা চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। তাছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, ব্যাংক এবং সিভিল সার্ভিসেও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ থাকছে। তাই যারা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করে থাকেন তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা করার দরকার নাই।আর সাবজেক্টের বিষয়টি হচ্ছে আপনি যে বিষয়ে কাজ করতে বেশি আগ্রহী বা যে বিষয় নিয়ে আপনার ভিতরে সৃজনশীলতা রয়েছে আপনি সেটা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। তাহলে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সেক্টরে আপনি ভালো কিছু করতে পারবেন। 


শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কি,মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যৎ, ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আরো অনেক বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি কোন বিষয়ে সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে বা এই বিষয়ে কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ। 


পূর্ববর্তী পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না ।

comment url